📄 ইমাম নববি রহ. সামান্য সময় ঘুমাতেন; যখন ঘুম প্রবল আকার ধারণ করত
হাফেজ সুযুতি রহ. রচিত 'আল-মানহালুস সাভি ফি তারজাতিল ইমাম নাববি' কিতাবে আছে, কামাল উদফাভি রহ. 'আল-বদরুস সাফির' নামক কিতাবে বলেছেন, ইমাম নববির ছাত্র প্রধান বিচারক বদরুদ্দিন রহ. আমাকে বলেছেন, তিনি তার ঘুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। জবাবে নববি রহ. বলেছেন, যখন ঘুম প্রবল হয় তখন সামান্য সময়ের জন্য কিতাবাদিতে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে যাই।
শিহাবুদ্দিন আহমদ ইবনে হামদান আওজায়ি 'অত্তাওয়াসসুত ওয়াল ফাতহু' কিতাবে বলেছেন, আমি সংবাদ পেয়েছি যে, ইমাম নববি নিরন্তর লিখে যেতেন। যখন ক্লান্ত হয়ে যেতেন তখন কলমটি রেখে দিয়ে আরাম করতেন আর নিম্নোক্ত চরনটি আবৃত্তি করতেন—
যদি বয়ে যায় এই নয়নবারি সু'দা ব্যতীত অন্যের তরে
ধরা হবে সেটা এমন অশ্রু যা বিনষ্ট অকাতরে।
📄 ইমাম নববি রহ. ‘আল-ওয়াসিত’ কিতাবটি চারশ বার পাঠ করেছেন
'আল-মানহালুস সাভি' কিতাবে আরও আছে, উদফাভি রহ. বলেছেন, একদা 'আল-ওয়াসিত' কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদানে তার সঙ্গে কেউ বিতর্কে লিপ্ত হলো। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে তর্ক করো, অথচ আমি এ কিতাবটি চারশ বার পাঠ করেছি?
তিনি ৬৭৬ হি. সনে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল সাকুল্যে ৪৫ বছর। এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বিশাল বিশাল অনেক কিতাব লিখে গেছেন। তার জীবনের দিনগুলোতে এগুলোকে ভাগ করলে প্রতিদিন চারটি করে খাতা পড়ে।
📄 ডাক্তার ইবনুন নফিস রহ. চিকিৎসাবিজ্ঞান, ফেকাহ ও সময় সংরক্ষণে ঈর্ষণীয় ব্যক্তি ছিলেন
যে সমস্ত বড়ো বড়ো মনীষী ও অনন্য শ্রেষ্ঠ ডাক্তারগণ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত হেফাজত করেছেন, কল্পনা-ভাবনাগুলো লিখে রেখেছেন বিস্ময়কর মুহূর্তগুলোতে, তাদের অন্যতম হলেন স্ব-যুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনুল নাফিস দিমাশকি রহ.; অতঃপর মিশরি শাফেয়ি।
সুবকি রহ. রচিত 'তাবাকাতুশ শাফেয়িয়্যাতিল কুবরা' এবং আল্লামা খাওয়ানেসারি রচিত 'রওজাতুল জান্নাত' গ্রন্থে সালাহুদ্দিন সাফাদি রহ.-এর 'আল-ওয়াফি বিল ওফায়াত' গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ আছে, যা থেকে আমি নিম্নোক্ত বিবরণটি কুড়িয়ে এনেছি:
তিনি হলেন ইমাম, মহাজ্ঞানী, ডাক্তার, আল্লামা আলাউদ্দিন ইবনুন নাফিস আলি ইবনে আবু হাজম কারশি, (মাওয়ারাউন্নাহার এলাকার কারশ নামক শহরের দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে) জন্ম: ৬১০ হি. সনে দামেশকে, মৃত্যু: ৬৮৭ হি. সনে কায়রোতে।
তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের অনন্য অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইমাম ছিলেন। চিকিৎসা-সংক্রান্ত তার লেখা উচ্চাঙ্গের অনেক কিতাব রয়েছে। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে 'আশশামেল' নামে একটি কিতাব লিখেছেন। এ কিতাবটির সূচিপত্র দ্বারা প্রতীয়মান হয় এটা তিনশ খণ্ডে সমাপ্ত ছিল। তার কোনো একজন শিষ্য এটা উল্লেখ করেছেন। আশিটি খণ্ড তিনি প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া 'আল-মুহাজজাব' নামে সুরমা সম্পর্কে একটি কিতাব লিখেছেন। এবং ইবনে সিনা লিখিত 'আল-কানুন'-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছেন, যা কয়েক খণ্ডে সমাপ্ত।
তিনি মানতিক সম্পর্কেও অভিজ্ঞ ছিলেন। এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত কিতাবও লিখেছেন। ইবনে সিনার 'আল-হিদায়া' নামক কিতাবটিরও ব্যাখ্যা করেছেন। তা ছাড়া ফিকহ, উসুলে ফিকহ, সাহিত্য, হাদিস ও ইলমুল বয়ান ইত্যাদি বিষয়েও কিতাব লিখেছেন। আবু ইসহাক সিরাজি রহ.-এর লেখা শাফেয়ি ফিকাহর কিতাব 'আত-তাম্বিহ' কিতাবটির শুরু থেকে সাহু সিজদার আলোচনা পর্যন্ত খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি কায়রোর মাসরুরিয়া মাদরাসায় ফিকাহ পাঠদানের দায়িত্বও পালন করেছেন।
মোটকথা, তিনি একাধিক বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। আর চিকিৎসাবিদ্যায় তো সারা পৃথিবীতে তার কোনো জুড়ি ছিল না। ইবনে সিনার পর তার মতো চিকিৎসাবিজ্ঞানী আর আসেনি। লোকেরা বলে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে তিনি ইবনে সিনাকেও ডিঙিয়ে গিয়েছিলেন। তার কিতাবগুলো তিনি মুখস্থ লেখাতেন। ইমাম বুরহানুদ্দিন ইবরাহিম রশিদি বলেছেন, আলা ইবনুল নফিস রহ. যখন কিতাব লেখার ইচ্ছা করতেন, তখন তার সামনে কলমগুলো তৈরি করে রাখা হতো। তিনি দেওয়ালের দিকে ফিরে বসে মুখস্থ লিখতে শুরু করতেন। বন্যার স্রোতের মতো লিখে যেতেন। কলম ক্লান্ত ও ভোঁতা হয়ে গেলে সেটা ফেলে দিয়ে অন্য আরেকটি হাতে নিতেন। যেন কলম কাটতে গিয়ে তার সময় নষ্ট না হয়। কিতাব লেখার সময় তিনি কোনো কিতাব দেখতেন না, সরাসরি হৃদয় থেকে লিখতেন।
📄 ইবনুন নফিস রহ. ফজর পর্যন্ত সারা রাত ইবনে ওয়াসেল রহ.-এর সাথে ইলমি আলোচনা করেছেন
তার ছাত্র কায়রোর ডাক্তার সাদিদ দিময়াতি রহ. বলেন, একবার কোনো এক রাতে ইবনুন নফিস ও কাজি জামালুদ্দিন ইবনে ওয়াসেল একত্রিত হলেন। আমি তাদের কাছে ঘুমিয়ে ছিলাম। এশার নামাজের পর তারা আলোচনা শুরু করেন। এক বিদ্যা থেকে আরেক বিদ্যার দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছিলেন। শায়খ আলাউদ্দিন ইবনুন নফিস শান্ত মনে দক্ষতার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কাজি জামালুদ্দিন মাঝেমধ্যেই উত্তেজিত হয়ে যেতেন এবং তার গলার স্বর উঁচু হয়ে যেত। তার চক্ষুদ্বয় রক্তিম হয়ে যেত। তার গলার রগসমূহ স্ফীত হয়ে যেত। ভোরের আলো ফুঠে উঠা পর্যন্ত তারা এভাবেই আলোচনা চালিয়ে গেলেন।
আলোচনা শেষ হবার পর কাজি জামালুদ্দিন বললেন, হে শায়খ আলাউদ্দিন! আমাদের কাছে রয়েছে অনেক বিষয়, অনেক সূক্ষ্ম তত্ত্ব ও অনেক মূলনীতি। কিন্তু আপনি! আপনার কাছে রয়েছে বহু বিজ্ঞানের অসংখ্য ভান্ডার।