📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইমাম নববি রহ. দু-বছর পর্যন্ত বিছানায় পিঠ লাগাননি

📄 ইমাম নববি রহ. দু-বছর পর্যন্ত বিছানায় পিঠ লাগাননি


হাফেজ যাহাবি রহ. 'তাযকিরাতুল হুজফায' নামক গ্রন্থে ও ইবনে কাজি শুহবাহ 'তাবাকাতুশ শাফেইয়্যা' গ্রন্থে ইমাম নববি ইয়াহইয়া ইবনে শরফ হাউরানি রহ. সম্পর্কে বলেছেন, তিনি হলেন ওলিকুল শিরোমণি, অনন্য হাফেজে হাদিস ও শায়খুল ইসলাম মুহিউদ্দিন আবু জাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শরফ ইবনে মুররি হিযামি হাউরানি শাফেয়ি। যিনি বহু উপকারী গ্রন্থের রচয়িতা।

তিনি ৬৩১ হি. সনে হাউরানের অন্তর্গত নাওয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৪৯ হি. সনে দামেশকে আসেন। সেখানে রাওয়াহিয়া মাদরাসায় অবস্থান করেন। তিনি মাদরাসার রুটি খেতেন। তিনি বলেছেন, আমি দু-বছর যাবৎ মাটিতে পিঠ লাগাইনি। তিনি মাত্র সাড়ে চার মাসে 'আত-তাম্বিহ' কিতাবটি মুখস্থ করেন। বাকি বছরে শায়খ কামাল ইসহাক ইবনে আহমদের নিকট 'আল-মুহাযযাব' কিতাবটির এক-চতুর্থাংশ মুখস্থ করে পড়েন।

তার ছাত্র আবুল হাসান ইবনুল আত্তার রহ. বলেছেন, শায়খ মুহিউদ্দিন রহ. তাকে বলেছেন, তিনি তার মাশায়েখদের নিকট ব্যাখ্যা ও সংশোধনসহ দৈনিক বারোটি সবক পড়তেন। ফেকাহ-সংক্রান্ত 'ওয়াসিত' কিতাবে দুইটি সবক, এ সংক্রান্তই 'মুহাযযাব' কিতাবে একটি সবক, হাদিস-সংক্রান্ত 'আল-জামউ বাইনাস সহিহাইন' কিতাবে একটি সবক, সহিহ মুসলিম শরিফে একটি সবক, নাহু-সংক্রান্ত ইবনে জিন্নির লেখা 'আল-লুমা' কিতাবে একটি সবক, অভিধান- সংক্রান্ত ইবনুস সিক্কিতের লেখা 'ইসলাহুল মানতিক' কিতাবে একটি সবক, সরফ বিষয়ে একটি সবক, উসুলে ফেকাহ সম্পর্কে একটি সবক, কখনো আবু ইসহাক লিখিত 'আল-লুমা' কিতাবে আবার কখনো ফখরুদ্দিন রাযি লিখিত 'আল-মুন্তাখাব' কিতাবে। আসমাউর রিজাল বিষয়ে একটি সবক, উসুলে দীন সম্পর্কে একটি সবক। নববি বলেন, আমি উক্ত পাঠ-সংক্রান্ত সব বিষয় লিখে রাখতাম। যেমন : জটিল বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা, ইবারত সুস্পষ্টকরণ, শব্দের সঠিক উচ্চারণ লিপিবদ্ধকরণ। আল্লাহ তায়ালা আমার সময়ে বরকত দান করেছেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইমাম নববি রহ. রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র একবার খেতেন

📄 ইমাম নববি রহ. রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র একবার খেতেন


আবু হাসান ইবনুল আত্তাব রহ. বলেন, আমার শায়খ আমাকে বলেছেন, তিনি কোনো মুহূর্ত নষ্ট করতেন না। রাতেও না, দিনেও না। তিনি সদা ইলম চর্চায় ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি রাস্তায় পথচলার সময়ও তাকরার ও মুতালাআ করতেন। পুরো ছটি বছর তিনি এভাবে কাটিয়ে দেন। এরপর তিনি লেখালিখি, অধ্যাপনা, উপদেশ প্রদান ও সত্যকথন শুরু করেন। তিনি দিন-রাত মিলিয়ে মাত্র একবার খেতেন, এশার নামাজের পর। আর সেহেরির সময় একবার পানি পান করতেন। তিনি ফলফলাদি ও ক্ষিরা খেতেন না। তিনি বলতেন, আমার আশঙ্কা হয় এগুলো আমার শরীরকে আর্দ্র করে দেবে এবং আমার ঘুম বৃদ্ধি করবে। তিনি সারা জীবন বিয়ে করেননি। একদা শায়খ বুরহানুদ্দিন এস্কেন্দারানি তার কাছে ইফতার করার জন্য পীড়াপীড়ি করলেন। তিনি বললেন, খাবার এখানে নিয়ে আসুন! একসঙ্গে খাব। এরপর তিনি খেয়েছেন। খাবার ছিল দু-পদের।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 খাবার, পোশাক ও জীবনযাপনে ইমাম নববি রহ.-এর অনাড়ম্বরতা ও অমৃসণতা

📄 খাবার, পোশাক ও জীবনযাপনে ইমাম নববি রহ.-এর অনাড়ম্বরতা ও অমৃসণতা


পাঠদান, রচনা, ইলম চর্চা, ইবাদত, জিকির ও খোরপোষে কঠিন জীবনযাপনে ধৈর্যধারণকে তিনি জীবনের অভ্যাস হিসেবে চরমভাবে গ্রহণ করেছিলেন। তার পোশাক ছিল সাদাসিধে কাপড়। তার পাগড়ি ছিল ছোটো ও চামড়ার।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইমাম নববি রহ. সামান্য সময় ঘুমাতেন; যখন ঘুম প্রবল আকার ধারণ করত

📄 ইমাম নববি রহ. সামান্য সময় ঘুমাতেন; যখন ঘুম প্রবল আকার ধারণ করত


হাফেজ সুযুতি রহ. রচিত 'আল-মানহালুস সাভি ফি তারজাতিল ইমাম নাববি' কিতাবে আছে, কামাল উদফাভি রহ. 'আল-বদরুস সাফির' নামক কিতাবে বলেছেন, ইমাম নববির ছাত্র প্রধান বিচারক বদরুদ্দিন রহ. আমাকে বলেছেন, তিনি তার ঘুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। জবাবে নববি রহ. বলেছেন, যখন ঘুম প্রবল হয় তখন সামান্য সময়ের জন্য কিতাবাদিতে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে যাই।

শিহাবুদ্দিন আহমদ ইবনে হামদান আওজায়ি 'অত্তাওয়াসসুত ওয়াল ফাতহু' কিতাবে বলেছেন, আমি সংবাদ পেয়েছি যে, ইমাম নববি নিরন্তর লিখে যেতেন। যখন ক্লান্ত হয়ে যেতেন তখন কলমটি রেখে দিয়ে আরাম করতেন আর নিম্নোক্ত চরনটি আবৃত্তি করতেন—
যদি বয়ে যায় এই নয়নবারি সু'দা ব্যতীত অন্যের তরে
ধরা হবে সেটা এমন অশ্রু যা বিনষ্ট অকাতরে।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন