📄 ইবনে কুদামা হাম্বলি রহ.-এর ওসিয়ত
ইমামে রব্বানি মুওয়াফফাকুদ্দিন ইবনে কুদামা, হাম্বলি, বিখ্যাত হাম্বলি ফকিহ ও আল-মুগনি কিতাবের লেখক আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ, (জন্ম: ৫৪১ হি., মৃত্যু: ৬২০ হি.)-এর একটি অত্যন্ত উপকারী ও ব্যাপক ওসিয়তনামা দ্বারা আমার পুস্তিকাটি সমাপ্ত করতে চাচ্ছি। নিম্নে তার ওসিয়তনামাটি তুলে ধরা হলো-তিনি তাঁর ওসিয়তনামার শুরুতে বলেছেন, 'আল্লাহ তোমাকে রহম করুন, তুমি নিজের মূল্যবান জীবনটাকে গনিমত মনে করো, তোমার প্রিয় হায়াতটিকে সংরক্ষণ করো। জেনে রাখো, তোমার হায়াত সীমিত। তোমার শ্বাস-প্রশ্বাসগুলো পরিমিত। প্রতিটি শ্বাসেই কিন্তু তোমার জীবনের একটা অংশ হ্রাস পায়। পুরো জীবনটাই খাটো। যা বাকি আছে সেটা অত্যন্ত সামান্য। তোমার জীবনের প্রতিটি অংশই একটি মহামূল্যবান জওহর, যার কোনো তুলনা নেই, যার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, এই সমান্য জীবন দ্বারাই কিন্তু অর্জিত হবে চিরস্থায়ী জীবন শান্তির বা যন্ত্রণাদায়ক কষ্টের।
এই জীবনটাকে যদি চিরস্থায়ী জীবনের সাথে তুলনা করো তাহলে জানতে পারবে যে, প্রতিটি শ্বাস চিরস্থায়ী আরামের যুগের হাজার বছরের চেয়েও অধিক সময়ের সমমানের হবে বা তার উল্টা হবে। (অর্থাৎ, কষ্টের হাজার বছরের চেয়েও অধিক সময়ের সমমানের হবে) আর যা এরূপ হয় তা হয় অমূল্য সম্পদ। কাজেই তুমি তোমার জীবনের দামি মুক্তাগুলোকে অলসতা করে নষ্ট করো না। এবং বিনামূল্যে ধ্বংস করো না।
চেষ্টা করো যেন তোমার প্রতিটি শ্বাস কোনো নেক কাজ বা সওয়াবের কাজে ব্যয় হয়। তোমার কাছে যদি দুনিয়ার কোনো মণি-মুক্তা থাকত, আর সেটা হারিয়ে যেত, তাহলে তুমি অবশ্যই প্রচণ্ডভাবে ব্যথিত হতে। মুক্তা কেন, বরং যদি তোমার একটি সামান্য স্বর্ণমুদ্রাও হারিয়ে যেত, তাহলে সেটার জন্যও তুমি দুঃখিত হতে। তাহলে তুমি তোমার মুহূর্তগুলো ও সময়গুলো কী করে অবহেলায় নষ্ট করো? কেন তুমি অযথা নষ্ট হয়ে যাওয়া জীবনের জন্য ব্যথিত হও না?'
লেখক বলেন, সম্মানিত পাঠক! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ও আমাকে সময়ের হেফাজত ও সময়কে নেক আমল ও উপকারী ইলম দ্বারা পূর্ণ করার তাওফিক দান করুন! আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন! যারা জীবন ও সময়ের মূল্য বুঝতে পেরেছে, যারা নিজেদেরকে, স্বজাতিকে ও স্বদেশকে ধোঁকা দেয় না এবং এরাই প্রকৃত জ্ঞানী।
📄 হজরত ইবনে মাসউদ রাদি.-এর লজ্জাবোধ
হজরত ইবনে মাসউদ রাদি.-যিনি একজন মহান সাহাবী-বলেন, আমি কোনো জিনিসের জন্য এতটা লজ্জিত হই না, যতটা লজ্জিত হই ওই দিনের জন্য যার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়, আর আমার বয়স কমে যায়, অথচ আমার আমলের মধ্যে কোনো বৃদ্ধি হয় না।
📄 ইমাম শাফেয়ি রহ. রাতকে তিন ভাগ করে নিতেন
ইমাম শাফেয়ি রহ. (জনা: ১৫০ হি., মৃত্যু: ২০ হি.)-এর শিষ্য রবি ইবনে সুলায়মান মুরাদি রহ. থেকে কাজি ইয়াজ রহ. বর্ণনা করে বলেন, শাফেয়ি রহ. রাতটাকে তিনভাগে ভাগ করে নিতেন। প্রথম ভাগে তিনি লিখতেন। দ্বিতীয় ভাগে নামাজ পড়তেন। তৃতীয় ভাগে ঘুমাতেন।
📄 ইবনুল বাগদাদি কেবল অপরাগে হয়েই ঘুমাতেন
খতিব রহ. রচিত 'তারিখে বাগদাদ' গ্রন্থে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকিহ বুজুর্গ হোসাইন ইবনে আহমদ ইবনে জাফর আবু আব্দিল্লাহ রহ. (মৃত্যু : ৪০৪ হি.)-যিনি ইবনুল বাগদাদি নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন-এর জীবনী আলোচনায় বর্ণিত হয়েছে, তিনি সত্যবাদী, দীনদার, আবেদ, জাহেদ, পরহেজগার ছিলেন। কোনো এক শায়েখকে আমি বলতে শুনেছি, আবু আব্দিল্লাহ ইবনুল বাগদাদি সদা আমাদের কাছে আসতেন এমতাবস্থায় যে, তার মাথা ফাটা ও কপাল আহত থাকত। একবার তাকে বলা হলো, এমনটা কীভাবে হয়? জবাবে তিনি বললেন, তিনি অপারগ না হয়ে ঘুমান না। তার সামনে সদা কালির দোয়াত বা থালা বা অন্য কোনো জিনিস রাখা থাকে। যখন ঘুম চাপে তখন সেই বস্তুটির ওপর পড়ে যান। ফলে সেটা তার মাথা ও কপালকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।