📄 অল্প হাসি বেশি কান্না
একবার হজরত আবু বকর কাতানি রহ. বললেন, আমি একজন সুদর্শন যুবককে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, 'তুমি কে?' সে বলল, 'আমি পরহেজগারি।' আমি বললাম, 'তুমি কোথায় থাকো?' সে বলল, 'চিন্তিত লোকদের অন্তরে।' কিছুক্ষণ পরে আমি ভয়ংকর আকৃতির একটি মেয়েকে দেখতে পেলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'তুমি কে?' সে বলল, 'আমি গোনাহ ও নাফরমানি অর্থাৎ, হাসি-তামাশা।' আমি বললাম, 'তুমি কোথায় থাকো?' সে বলল, 'আমোদ-প্রমোদকারীদের অন্তরে।' আমি জাগ্রত হয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম, হাসির প্রবল কারণ না হলে আমি আর কখনো হাসব না।
📄 আল্লামা জালালুদ্দিন রুমি রহ.-এর নামাজ
নামাজের সময় হলেই আল্লামা জালালুদ্দিন রুমি রহ. কিবলার দিকে ফিরে যেতেন। তখন তাঁর চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে যেত। নামাজ পড়া শুরু করলে সম্পূর্ণরূপে নামাজের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। তাঁর খাদেম বলেন, 'অনেকবার আমি স্বচক্ষে দেখতে পেয়েছি যে, তিনি ইশার নামাজ প্রথম ওয়াক্তেই পড়ে ফেলতেন। অতঃপর ইশার প্রথম ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকতেই নফল নামাজের নিয়ত বেঁধে নামাজে এমনভাবে মগ্ন হতেন যে, দু-রাকাত নামাজ শেষ করতেই ভোর হয়ে যেত।'
📄 চিরুনি আনতেও নিয়ত!
আমাদের আকাবিররা প্রতিটি কাজের শুরুতেই নিয়ত করতেন। বর্ণিত আছে, জনৈক ব্যক্তি ঘরের ছাদে বসে মাথা ম্যাসেজ করছিলেন। হঠাৎ স্ত্রীকে ডেকে তার চিরুনি এনে দেওয়ার জন্য বললেন। স্ত্রী বলল, 'আয়নাও কি নিয়ে আসব?' তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, 'ঠিক আছে নিয়ে আসো।' স্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল, 'আপনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন কেন? আর আয়নার ব্যাপারেও এত ভাবলেন কেন?' তিনি বললেন, 'আমি একটি নিয়ত করে তোমাকে চিরুনি আনতে বলেছিলাম, যখন তুমি আয়নার কথা বললে, তখন আমার কোনো নিয়ত ছিল না, আমি এ জন্যই কিছু সময় চুপ ছিলাম যাতে এটার জন্য আমি কোনো একটা ভালো নিয়ত করতে পারি।'৬
টিকাঃ
৬. আওয়ারিফুল মায়ারিফ: ৪৯৭।
📄 ইবনে কুদামা হাম্বলি রহ.-এর ওসিয়ত
ইমামে রব্বানি মুওয়াফফাকুদ্দিন ইবনে কুদামা, হাম্বলি, বিখ্যাত হাম্বলি ফকিহ ও আল-মুগনি কিতাবের লেখক আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ, (জন্ম: ৫৪১ হি., মৃত্যু: ৬২০ হি.)-এর একটি অত্যন্ত উপকারী ও ব্যাপক ওসিয়তনামা দ্বারা আমার পুস্তিকাটি সমাপ্ত করতে চাচ্ছি। নিম্নে তার ওসিয়তনামাটি তুলে ধরা হলো-তিনি তাঁর ওসিয়তনামার শুরুতে বলেছেন, 'আল্লাহ তোমাকে রহম করুন, তুমি নিজের মূল্যবান জীবনটাকে গনিমত মনে করো, তোমার প্রিয় হায়াতটিকে সংরক্ষণ করো। জেনে রাখো, তোমার হায়াত সীমিত। তোমার শ্বাস-প্রশ্বাসগুলো পরিমিত। প্রতিটি শ্বাসেই কিন্তু তোমার জীবনের একটা অংশ হ্রাস পায়। পুরো জীবনটাই খাটো। যা বাকি আছে সেটা অত্যন্ত সামান্য। তোমার জীবনের প্রতিটি অংশই একটি মহামূল্যবান জওহর, যার কোনো তুলনা নেই, যার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, এই সমান্য জীবন দ্বারাই কিন্তু অর্জিত হবে চিরস্থায়ী জীবন শান্তির বা যন্ত্রণাদায়ক কষ্টের।
এই জীবনটাকে যদি চিরস্থায়ী জীবনের সাথে তুলনা করো তাহলে জানতে পারবে যে, প্রতিটি শ্বাস চিরস্থায়ী আরামের যুগের হাজার বছরের চেয়েও অধিক সময়ের সমমানের হবে বা তার উল্টা হবে। (অর্থাৎ, কষ্টের হাজার বছরের চেয়েও অধিক সময়ের সমমানের হবে) আর যা এরূপ হয় তা হয় অমূল্য সম্পদ। কাজেই তুমি তোমার জীবনের দামি মুক্তাগুলোকে অলসতা করে নষ্ট করো না। এবং বিনামূল্যে ধ্বংস করো না।
চেষ্টা করো যেন তোমার প্রতিটি শ্বাস কোনো নেক কাজ বা সওয়াবের কাজে ব্যয় হয়। তোমার কাছে যদি দুনিয়ার কোনো মণি-মুক্তা থাকত, আর সেটা হারিয়ে যেত, তাহলে তুমি অবশ্যই প্রচণ্ডভাবে ব্যথিত হতে। মুক্তা কেন, বরং যদি তোমার একটি সামান্য স্বর্ণমুদ্রাও হারিয়ে যেত, তাহলে সেটার জন্যও তুমি দুঃখিত হতে। তাহলে তুমি তোমার মুহূর্তগুলো ও সময়গুলো কী করে অবহেলায় নষ্ট করো? কেন তুমি অযথা নষ্ট হয়ে যাওয়া জীবনের জন্য ব্যথিত হও না?'
লেখক বলেন, সম্মানিত পাঠক! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ও আমাকে সময়ের হেফাজত ও সময়কে নেক আমল ও উপকারী ইলম দ্বারা পূর্ণ করার তাওফিক দান করুন! আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন! যারা জীবন ও সময়ের মূল্য বুঝতে পেরেছে, যারা নিজেদেরকে, স্বজাতিকে ও স্বদেশকে ধোঁকা দেয় না এবং এরাই প্রকৃত জ্ঞানী।