📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবাদতের মৌসুমে আকাবিরদের সাধনা

📄 ইবাদতের মৌসুমে আকাবিরদের সাধনা


হজরত শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি রহ. রমজান মাসে এত সময় নিয়ে তারাবির নামাজ পড়তেন যে, সেহরির সময় হয়ে যেত। সেহরির পর ফজরের নামাজ আদায় করতেন। এভাবে সারা রাত ইবাদতে কাটিয়ে দিতেন। তাঁর স্ত্রী তাঁর শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার চিন্তা করলেন। বললেন, 'একদিন অন্তত বিশ্রাম নিন।' কিন্তু তিনি চিন্তা করতেন, আগামী রমজানে কে থাকবে, আর কে থাকবে না, তা তো আর কারও জানা নেই। তাই তিনি সারা রাত এভাবে ইবাদতে কাটিয়ে দিতেন। এভাবে রমজানের প্রথম দশক অতিবাহিত হয়ে যায়।

হজরতের স্ত্রী একদিন একটি কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি ছোট বাচ্চাকে কারি সাহেবের কাছে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন যে, 'কারি সাহেব! আপনি একদিন হজরতের কাছে ওজর পেশ করবেন যে, আমার শরীর ভালো না। বিশ্রামের প্রয়োজন। তাতে হয়তো তিনিও একদিন বিশ্রামের সুযোগ পাবেন।' কারণ, বিবি সাহেবা জানতেন যে, হজরত অন্যের সমস্যা সমাধানে খুব গুরুত্ব প্রদান করেন।

এ খবর শুনে কারি সাহেব বললেন, 'এটা তো অনেক ভালো খবর। তিনি আমার শায়েখ ও মুরশিদ। আমার এ ওজরের দ্বারা যদি তাঁর বিশ্রামের সুযোগ হয়, তাহলে আজ রাতেই হজরতের বিশ্রামের ব্যবস্থা করব।'

পরিকল্পনামাফিক রাতে কারি সাহেব বললেন, 'হজরত! আজ আমার শরীর ক্লান্ত। একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। খুব বেশি তিলাওয়াত করতে পারব না।' হজরত বললেন, 'ঠিক আছে, আপনি অল্প তিলাওয়াত করে নামাজ শেষ করুন।' নামাজ শেষ হলে হজরত বললেন, 'আপনি যেহেতু ক্লান্ত সেহেতু আর বাড়ি যাওয়ার দরকার নেই, আমার বিছানায় শুয়েই আরাম করুন। বাতি-জানালা বন্ধ করে দিন।' কারি সাহেব বাধ্য হয়েই হজরতের বিছানায় শুয়ে পড়লেন। কারি সাহেব বলেন, 'কিছুক্ষণ পর আমার ঘুম ভেঙে গেল, হঠাৎ আমি লক্ষ করলাম, কেউ আমার পা টিপছে। আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখি আমার শায়েখ ও মুরশিদ আমার পা টিপে দিচ্ছে। আমি বললাম, 'হজরত! এ কী করছেন?' তিনি বললেন, 'আমি ভাবলাম, আপনি তো অসুস্থ, হয়তো পা টিপে দিলে একটু ভালো লাগবে।' আমি বললাম, 'আপনি যদি রাত জেগেই কাটাতে চান তাহলে চলুন, আমি তিলাওয়াত করছি, আপনি শুনুন। তাতেই রাত কেটে যাবে।' হজরত খুব খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি জায়নামাজ বিছিয়ে বসলেন। আমি তিলাওয়াত করতে থাকলাম, আর তিনি শুনতে থাকলেন। আল্লাহু আকবার!

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 প্রহারও আল্লাহর জন্য

📄 প্রহারও আল্লাহর জন্য


হজরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবি রহ. আমাদের আকাবিরদের মাঝে অন্যতম এক ব্যক্তি। একবার তিনি এক বাচ্চাকে অপরাধের কারণে শাস্তি দিচ্ছিলেন। দু-চারটি থাপ্পড় দিলেন। ব্যথা পেয়ে ছেলেটি বলল, 'আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দিন।' হজরত তখন বললেন, 'আরে আল্লাহর বান্দা! আমি তো তোমাকে আল্লাহর জন্যই প্রহার করছি।'

তাঁদের রাগের মুহূর্তের শাস্তিও ছিল আল্লাহর জন্য।৫

টিকাঃ
৫. খুতুবাতে জুলফিকার: ৬/৩০।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 অবিচলতা

📄 অবিচলতা


একবার হজরত হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে আলেমগণের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া উচিত নয়। অন্য এক মজলিসে তিনি বলেন, যখন আমি ১৯২৩ সনে করাচির জেলখানায় ছিলাম, তখন বাংলার কাউন্সিলের এক সদস্য আমাকে বলল, চল্লিশ হাজার রুপি নগদ আর মাসিক পাঁচশ রুপি বেতনে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসর পদে আপনাকে প্রস্তাব করছি। আপনি তা গ্রহণ করুন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমার দায়িত্ব কী? তিনি বললেন, কিছু করতে হবে না। আপনি শুধু আজাদির আন্দোলনে চুপ থাকবেন। তিনি বললেন, হজরত শায়খুল হিন্দ রহ. যে মিশনে আমাকে লাগিয়েছেন, তা থেকে সরে আসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 দুনিয়াবিমুখতা

📄 দুনিয়াবিমুখতা


হজরত জাকারিয়া রহ.-কে চট্টগ্রাম অথবা ঢাকার মাদরাসা আলিয়াতে শায়খুল হাদিস পদে যোগদান করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। শুধু তিরমিজি ও বুখারি পড়ানোর কথা ছিল। মাসিক বেতন ছিল বারোশ রুপি। প্রথমে চিঠি পাঠানো হয়। তারপর জরুরি তারবার্তা পাঠানো হয়। তিনি বলেন, 'তারবার্তার জবাবে আমি শুধু লিখেছি, যেসব বন্ধুগণ আপনাদের কাছে আমার নাম প্রস্তাব করেছে, তারা শুধু ভালো ধারণার ওপর ভিত্তি করে এ কাজ করেছে। অধম এর উপযুক্ত নয়।'

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন