📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 তোমার লজ্জাহীনতা আমাকে অন্ধ করে দিয়েছে

📄 তোমার লজ্জাহীনতা আমাকে অন্ধ করে দিয়েছে


যদি আমরা আমাদের আকাবির ও আসলাফদের জীবনীর দিকে দৃষ্টি দিই, তবে তাঁদের জীবনে দুর্লভ অনেক কিছুই দেখতে পাব। ইমাম আবু হানিফা রহ. একবার কোথাও যাচ্ছিলেন। এক লোক গোসলখানা থেকে গোসল করে বের হলো। সে এমন লুঙ্গি পরা ছিল যা হাঁটুর ওপরে ছিল; অর্থাৎ শরীরের যে অঙ্গগুলো ঢেকে রাখা ফরজ তা খোলা ছিল। হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ. সাথে সাথে তাঁর চোখ বন্ধ করে নিলেন। লোকটি কাছে এসে বলতে লাগল, 'নুমান! আপনি কবে থেকে অন্ধ হয়েছেন?' ইমাম আবু হানিফা রহ. বললেন, 'যখন থেকে তোমার লজ্জা-শরম বিদায় নিয়েছে তখন থেকে আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছি।'

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 সিজদা থেকে মাথা উঠাব কীভাবে?

📄 সিজদা থেকে মাথা উঠাব কীভাবে?


হজরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান গাঙ্গুহি রহ. নামাযে দীর্ঘ সময় সিজদায় কাটাতেন। একবার তাকে কেউ দীর্ঘ সিজদার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, 'আমি যখন সিজদায় যাই তখন আমার মনে হয়, আমি কি পরবর্তী সিজদা দিতে পারব? এ চিন্তা থেকেই সিজদা থেকে মাথা উঠাতে মন চায় না।'

হজরত ইয়াহইয়া রহ.-ও এমন করতেন। দীর্ঘ সিজদার ব্যাপারে তাঁকেও যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, এক বর্ণনায় এসেছে: 'সিজদাকারী আল্লাহর পায়ের ওপরই সিজদা করে থাকে।' তাই যখন আমি সিজদা করি, তখন আমার মনে হয়, আমি তো আল্লাহর পায়ের ওপরই সিজদা করছি। তাই মাথা উঠাতে মন চায় না।"

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 অসুর সাথে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া

📄 অসুর সাথে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া


একবার আমার হজরত মুজাদ্দিদে আলফেসানি রহ.-এর পরিবারের এক সন্তানের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। গিয়ে দেখলাম, তাঁদের বাচ্চারা বাড়ির আঙিনায় ফুটবল খেলছে। নতুন বাড়ি। বাড়ি থেকে মসজিদ দূরে হওয়ায় তারা বাড়িতেই নামাজ আদায় করে। ইতিমধ্যে নামাজের সময় হয়ে গেল। মাগরিবের নামাজের আজান দেওয়া হলো। জামাতের জন্য আমরা কাতার সোজা করলাম। ছোটো-বড়ো সবাই জামাতে শামিল হলো। আমি ঘরের প্রধানকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'এরা অযু করবে না?' তিনি বললেন, 'এদের অযু আগে থেকেই আছে। অযু করেই তারা খেলতে গিয়েছিল।' নামাজ শেষ হওয়ার পর তিনি আরও বললেন, 'আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে এ নিয়ম চলে আসছে যে, চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই বাচ্চাদের জাগ্রত অবস্থায় সর্বদা অযুর সাথে থাকার শিক্ষা দেওয়া হয়।'

পৃথিবীর এমন নাজুক সময়েও অনেকের মনে সর্বদা অযু অবস্থায় থাকার ইচ্ছা রয়েছে। জীবন যেভাবে পরিচালিত হবে, মৃত্যু সেভাবেই আসবে। সুতরাং সর্বদা অযুর সাথে থাকলে মৃত্যুও অযুর ওপরই হবে।৪

টিকাঃ
৩. তামান্নায়ে দিল: ১২২।
৪. খুতুবাতে জুলফিকার, পৃ. ৫/১২৫।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবাদতের মৌসুমে আকাবিরদের সাধনা

📄 ইবাদতের মৌসুমে আকাবিরদের সাধনা


হজরত শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি রহ. রমজান মাসে এত সময় নিয়ে তারাবির নামাজ পড়তেন যে, সেহরির সময় হয়ে যেত। সেহরির পর ফজরের নামাজ আদায় করতেন। এভাবে সারা রাত ইবাদতে কাটিয়ে দিতেন। তাঁর স্ত্রী তাঁর শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার চিন্তা করলেন। বললেন, 'একদিন অন্তত বিশ্রাম নিন।' কিন্তু তিনি চিন্তা করতেন, আগামী রমজানে কে থাকবে, আর কে থাকবে না, তা তো আর কারও জানা নেই। তাই তিনি সারা রাত এভাবে ইবাদতে কাটিয়ে দিতেন। এভাবে রমজানের প্রথম দশক অতিবাহিত হয়ে যায়।

হজরতের স্ত্রী একদিন একটি কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি ছোট বাচ্চাকে কারি সাহেবের কাছে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন যে, 'কারি সাহেব! আপনি একদিন হজরতের কাছে ওজর পেশ করবেন যে, আমার শরীর ভালো না। বিশ্রামের প্রয়োজন। তাতে হয়তো তিনিও একদিন বিশ্রামের সুযোগ পাবেন।' কারণ, বিবি সাহেবা জানতেন যে, হজরত অন্যের সমস্যা সমাধানে খুব গুরুত্ব প্রদান করেন।

এ খবর শুনে কারি সাহেব বললেন, 'এটা তো অনেক ভালো খবর। তিনি আমার শায়েখ ও মুরশিদ। আমার এ ওজরের দ্বারা যদি তাঁর বিশ্রামের সুযোগ হয়, তাহলে আজ রাতেই হজরতের বিশ্রামের ব্যবস্থা করব।'

পরিকল্পনামাফিক রাতে কারি সাহেব বললেন, 'হজরত! আজ আমার শরীর ক্লান্ত। একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। খুব বেশি তিলাওয়াত করতে পারব না।' হজরত বললেন, 'ঠিক আছে, আপনি অল্প তিলাওয়াত করে নামাজ শেষ করুন।' নামাজ শেষ হলে হজরত বললেন, 'আপনি যেহেতু ক্লান্ত সেহেতু আর বাড়ি যাওয়ার দরকার নেই, আমার বিছানায় শুয়েই আরাম করুন। বাতি-জানালা বন্ধ করে দিন।' কারি সাহেব বাধ্য হয়েই হজরতের বিছানায় শুয়ে পড়লেন। কারি সাহেব বলেন, 'কিছুক্ষণ পর আমার ঘুম ভেঙে গেল, হঠাৎ আমি লক্ষ করলাম, কেউ আমার পা টিপছে। আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখি আমার শায়েখ ও মুরশিদ আমার পা টিপে দিচ্ছে। আমি বললাম, 'হজরত! এ কী করছেন?' তিনি বললেন, 'আমি ভাবলাম, আপনি তো অসুস্থ, হয়তো পা টিপে দিলে একটু ভালো লাগবে।' আমি বললাম, 'আপনি যদি রাত জেগেই কাটাতে চান তাহলে চলুন, আমি তিলাওয়াত করছি, আপনি শুনুন। তাতেই রাত কেটে যাবে।' হজরত খুব খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি জায়নামাজ বিছিয়ে বসলেন। আমি তিলাওয়াত করতে থাকলাম, আর তিনি শুনতে থাকলেন। আল্লাহু আকবার!

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন