📄 ইমাম আবু হানিফা রহ. ও সতেরো হাদিস
বিদেশে একবার এক লোকের সঙ্গে আমার দেখা হলো। সে আমাকে বলল, 'ইমাম আবু হানিফা রহ.' মাত্র সতেরোটি হাদিস জানতেন। তারপরও আপনারা নিজেদেরকে হানাফি বলেন?' আমি বললাম, 'আপনার কথা শুনে তো আমি ১০০% থেকে ১০১% হানাফি হয়ে গেলাম।' সে বলল, 'মানে।' আমি বললাম, 'এটা তো সত্য যে হজরত আবু হানিফা রহ.-এর নেতৃত্বে ছয় লক্ষাধিক মাসআলা লিপিবদ্ধ হয়েছে। সুতরাং যে মনীষী মাত্র সতেরোটি হাদিস থেকে ছয় লক্ষ মাসআলা বের করতে পারেন, তাঁর অনুসরণ না করে, তাকে ইমাম না মেনে উপায় আছে? তাঁকে কী করে শ্রদ্ধা না করে পারা যায়? তাঁকে শ্রদ্ধা করতে পারাটা আমি সৌভাগ্যের কারণ মনে করি। এসব কথা শুনে লোকটি নিজেকে শুধরে নিল। বলল, 'আসলে হজরত আবু হানিফা রহ.-কে আল্লাহ তাআলা এমন উচ্চ মাকাম দান করেছেন যে, তা বোঝাও কঠিন।
তাফসির সম্পর্কে এ কথা ভালো করে জেনে নিন, পবিত্র কুরআন শরিফের ওই অর্থই গ্রহণযোগ্য যা ওলামায়ে কেরাম করেছেন। তাঁদের সাহচর্যে থেকেই অর্থ উদ্ধার করতে হবে। শুধু কিতাব পড়লে হবে না। সকলের জ্ঞান-বুদ্ধি এক নয়। আমাদের আকাবিরগণ যা বুঝতে পারতেন আমরা তা বুঝতে পারি না। এ জন্য তাঁদেরকে মেনেই আমাদের চলতে হবে। যেমনটি হাদিসে এসেছে : 'আকাবিরদের সাথেই তোমাদের বরকত।'২
টিকাঃ
১. তাঁর নাম-নুমান ইবনে সাবিত। আবু হানিফা তাঁর লকব। তিনি ৮০ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। এবং ১৫০ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর দিন হজরত ইমাম শাফি রহ. জন্মগ্রহণ করেন।
২. খুতুবাতে জুলফিকার: ৪/১৭।
📄 তোমার লজ্জাহীনতা আমাকে অন্ধ করে দিয়েছে
যদি আমরা আমাদের আকাবির ও আসলাফদের জীবনীর দিকে দৃষ্টি দিই, তবে তাঁদের জীবনে দুর্লভ অনেক কিছুই দেখতে পাব। ইমাম আবু হানিফা রহ. একবার কোথাও যাচ্ছিলেন। এক লোক গোসলখানা থেকে গোসল করে বের হলো। সে এমন লুঙ্গি পরা ছিল যা হাঁটুর ওপরে ছিল; অর্থাৎ শরীরের যে অঙ্গগুলো ঢেকে রাখা ফরজ তা খোলা ছিল। হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ. সাথে সাথে তাঁর চোখ বন্ধ করে নিলেন। লোকটি কাছে এসে বলতে লাগল, 'নুমান! আপনি কবে থেকে অন্ধ হয়েছেন?' ইমাম আবু হানিফা রহ. বললেন, 'যখন থেকে তোমার লজ্জা-শরম বিদায় নিয়েছে তখন থেকে আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছি।'
📄 সিজদা থেকে মাথা উঠাব কীভাবে?
হজরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান গাঙ্গুহি রহ. নামাযে দীর্ঘ সময় সিজদায় কাটাতেন। একবার তাকে কেউ দীর্ঘ সিজদার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, 'আমি যখন সিজদায় যাই তখন আমার মনে হয়, আমি কি পরবর্তী সিজদা দিতে পারব? এ চিন্তা থেকেই সিজদা থেকে মাথা উঠাতে মন চায় না।'
হজরত ইয়াহইয়া রহ.-ও এমন করতেন। দীর্ঘ সিজদার ব্যাপারে তাঁকেও যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, এক বর্ণনায় এসেছে: 'সিজদাকারী আল্লাহর পায়ের ওপরই সিজদা করে থাকে।' তাই যখন আমি সিজদা করি, তখন আমার মনে হয়, আমি তো আল্লাহর পায়ের ওপরই সিজদা করছি। তাই মাথা উঠাতে মন চায় না।"
📄 অসুর সাথে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া
একবার আমার হজরত মুজাদ্দিদে আলফেসানি রহ.-এর পরিবারের এক সন্তানের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। গিয়ে দেখলাম, তাঁদের বাচ্চারা বাড়ির আঙিনায় ফুটবল খেলছে। নতুন বাড়ি। বাড়ি থেকে মসজিদ দূরে হওয়ায় তারা বাড়িতেই নামাজ আদায় করে। ইতিমধ্যে নামাজের সময় হয়ে গেল। মাগরিবের নামাজের আজান দেওয়া হলো। জামাতের জন্য আমরা কাতার সোজা করলাম। ছোটো-বড়ো সবাই জামাতে শামিল হলো। আমি ঘরের প্রধানকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'এরা অযু করবে না?' তিনি বললেন, 'এদের অযু আগে থেকেই আছে। অযু করেই তারা খেলতে গিয়েছিল।' নামাজ শেষ হওয়ার পর তিনি আরও বললেন, 'আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে এ নিয়ম চলে আসছে যে, চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই বাচ্চাদের জাগ্রত অবস্থায় সর্বদা অযুর সাথে থাকার শিক্ষা দেওয়া হয়।'
পৃথিবীর এমন নাজুক সময়েও অনেকের মনে সর্বদা অযু অবস্থায় থাকার ইচ্ছা রয়েছে। জীবন যেভাবে পরিচালিত হবে, মৃত্যু সেভাবেই আসবে। সুতরাং সর্বদা অযুর সাথে থাকলে মৃত্যুও অযুর ওপরই হবে।৪
টিকাঃ
৩. তামান্নায়ে দিল: ১২২।
৪. খুতুবাতে জুলফিকার, পৃ. ৫/১২৫।